“ডায়বেটিস এর আদ্যোপান্ত”



“ডায়বেটিস এর আদ্যোপান্ত”ইন্সুলিনের কার্যপদ্ধতিঃ
আমরা যখন কোন খাদ্য গ্রহণ করি, হজম শেষে তা চিনি/সুগার/গ্লুকোস এ পরিণত হয়। এই চিনি প্রথমে রক্তে পৌছায়, এরপর রক্ত থেকে কোষে কোষে পৌছায়। কোষের ভিতরে এই চিনি থেকে শক্তি উতপাদন হয়। রক্ত থেকে কোষে চিনি পৌছানোর কাজে সাহায্য করে ইন্সুলিন নামক একটি হরমোন। চিনি যখন প্রথমে রক্তে পৌছায় তখন প্যানক্রিয়াস বা অগ্নাশয়ের একটি বিশেষ ধরণের কোষ (আইলেট অফ ল্যাঙ্গারহ্যান্ স) থেকে ইন্সুলিন তৈরী হয়। এই ইন্সুলিন তখন শরীরের প্রতিটা কোষে কোষে যেয়ে রক্তে চিনি থাকার খবর টা পৌছে দেয়। এই খবর পৌছানোর ব্যাপারটাও বেশ মজার। কোষের বহিরাবরনে “রিসেপ্টর” নামক একটি প্রোটিন থাকে। একটু মজা করে বলি, ধরে নিন “রিসেপ্টর” গুলো হলো কোষ নামক বাড়ির জানালার মত। ইন্সুলিন যেন সেই বাড়িতে টোকা দিয়ে বলে, “বাড়িতে কে আছেন? রক্তে অনেক চিনি আছে, বাড়িতে ঢোকানোর ব্যবস্থা করেন”, এই সিগনালের পরিপ্রেক্ষিতে কোষের গায়ে “গ্লুকোস ট্রান্সপোর্টার (GLUT)” নামক দরজা খুলে যায়। এই দরজা দিয়েই কোষের ভিতর চিনি প্রবেশ করে। এবং তারপর কোষের ভিতর এই চিনি ভেঙ্গে শক্তি উতপাদিন হয়।
395946 408800485843214 531501661 n “ডায়বেটিস এর আদ্যোপান্ত”
ডায়বেটিস এর টাইপঃ
ডায়বেটিস মূলত দুই ধরণের- টাইপ ১ ও টাইপ ২।
>টাইপ ১ ডায়বেটিস হলো বংশগত এবং কম বয়সেই এই রোগটা দেখা দেয়। এই ধরণের ডায়বেটিস এর কারণ হলো অগ্নাশয়েরইন্সুলিন উতপাদনকারী কোষগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়া। ফলে, শরীরে পর্যাপ্ত ইন্সুলিন তৈরী হয়না। তাই খাওয়ার পরে যখন রক্তে চিনির পরিমাণ বেড়ে যায়, তা কোষে কোষে ঢুকানোর কোন ব্যবস্থাই শরীরে থাকেনা। ফলে চিনি রক্তেই রয়ে যায়।
>টাইপ ২ ডায়বেটিসে, অগ্নাশয়ও ঠিক থাকে, ইন্সুলিনও তৈরী হয়, কিন্তু কোষে কোষে থাকা “রিসেপ্টর” গুলো কাজ করেনা। ফলে খাওয়ার পরে যখন রক্তে চিনির পরিমাণ বেড়ে যায়, ইন্সুলিন কোষের “রিসেপ্টর” কে সেই খবর ঠিকই জানায়, কিন্তু “রিসেপ্টর” গুলো তাতে কোন সাড়া দেয়না। ফলে চিনি রক্তেই রয়ে যায়। রিসেপ্টরের এই ধরণের বিকৃতি ধীরে ধীরে ঘটে। তাই টাইপ ২ ডায়বেটিস বেশি বয়সে গিয়ে হয়।
“ডায়বেটিস এর কারণ কি অতিরিক্ত চিনি না অন্য কিছু?”
উপরের আলোচনা থেকে দুই ধরণের ডায়বেটিস এর কারণ ই তো জানলেন, সুতরাং বুঝতেই পারছেন যে ডায়বেটিস হওয়ার সাথে অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার সম্পর্ক নেই। চিনি খেলে যে ডায়বেটিস হয়না, তা কিন্তু বিজ্ঞানীরা হাতে নাতে প্রমাণ করেছেন। ২০০৩ সালে করা একটি গবেষনায় ৩৯০০০ মধ্যবয়সী মহিলার উপর গবেষনা করে অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার সাথে ডায়বেটিস হওয়ার কোন সম্পর্ক পাননি (লিংক দেখুন), যদিও কিছু বিজ্ঞানী এখনো চিনি কেই দায়ী মনে করেন এবং প্রমাণের আশায় এখনো গবেষনা চালিয়ে যাচ্ছেন।অগ্ন্যাশয়ের ইন্সুলিন উতপাদন কারী কোষে গন্ডগোল এবং “রিসেপ্টর” এ গন্ডগোল দুটো হওয়ার পিছনেই ভূমিকা রাখে বংশগত কারণ। তবে হ্যা, অতিরিক্ত চিনি খেলে আপনার ওজন বাড়বে। আর অতিরিক্ত ওজন দুই ধরণের ডায়বেটিস ঘটাতেই সহায়ক ভূমিকা রাখে। শরীরে ফ্যাট সেল বেড়ে গেলে, ফ্যাট সেল গুলো থেকে এমন কিছু পদার্থ বের হয় যা রিসেপ্টর গুলোর কার্যকারীতা কমিয়ে দিয়ে টাইপ ২ ডায়বেটিস তৈরী করে। ফলে শরীরে ইন্সুলিন তৈরী হলেও কোষে চিনি ঢুকার দরজাটি আর খুলেনা। শরীর কি সমস্যা হলো বুঝতে না পেরে, আরো বেশি বেশি ইন্সুলিন তৈরী করতে চেষ্টা করে। ফলে অগ্ন্যাশয়ের ইন্সুলিন উতপাদনকারী কোষ গুলোও আস্তে আস্তে ড্যামেজ হয়ে, টাইপ ২ এর পাশাপাশি টাইপ ১ ডায়বেটিস এর ও সূচনা ঘটায়।
ডায়বেটিস এর লক্ষনঃ
রক্তে অতিরিক্ত চিনি থাকার ফলেই রোগীর মধ্যে ডায়বেটিস এর লক্ষন গুলো দেখা যায়। ডায়বেটিস এর লক্ষন মূলত তিনটি p- polyuria(ঘন ঘন মুত্রত্যাগ),polydipsia (পিপাসা) এবং polyphagia(ক্ষুধা), কিডনীর সাহায্যে মূত্রের মাধ্যমে রক্তের অতিরিক্ত চিনি বের করে দেয়ার প্রয়োজনেই ঘন ঘন মূত্র তৈরী হয়। ঘন ঘন মূত্রের পরে শরীরে পানির পরিমাণ কমে যাওয়াতে তৃষনা ও বেশি পায়।আর কোষ গুলোতে চিনি ঢুকতে না পারার কারনে কোষে কোষে কম শক্তি উতপাদন হয়ে, শরীরের শক্তির ঘাটতি মেটাতে মস্তিষ্ক ক্ষুদার অনুভূতি তৈরী করে, যাতে মানুষটি শক্তি ঘাটতি মেটাতে আরো খাদ্য গ্রহণ করে।
ডায়বেটিস এর ক্ষতিকর প্রভাবঃ
ডায়বেটিস এর লক্ষন গুলো তো জানলাম, এখন জানি এর ফলে শরীরের কি কি ক্ষতি হয়। রক্তের অতিরিক্ত চিনি চোখের রেটিনার রক্তনালী কে ক্ষতিগ্রস্ত করে দৃষ্টিশক্তি ব্যহত করে, ব্রেনের রক্ত সরবরাহকারী নালীর পুরত্ব বৃদ্ধি করে ব্রেনে অক্সিজেন সরবরাহ কমিয়ে দেয়, কিডনীর নেফ্রনের পুরত্ব বাড়িয়ে দিয়ে কিডনীর কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়, যে কোন ধরণের ঘা কে শুকাতে বিলম্ব ঘটায়। তাছাড়াও হার্টের রোগ ও স্ট্রোকেও ডায়বেটিস সহায়ক ভূমিকা রাখে।
ডায়বেটিস প্রতিরোধঃ
ডায়বেটিস মূলত বংশগত রোগ, তাই জেনেটিক ফ্যাকটর টা প্রতিরোধ করা আমাদের পক্ষা সম্ভব না। তবে অতিরিক্ত ওজন, আলস্যপূর্ণ জীবন যাপন, খাদ্যাভাস, অপ্রতুল ব্যায়াম, ধূমপান-ইত্যাদি যেহেতু ডায়বেটিস কে ত্বরানিত করে, এসবের ব্যাপারে আমাদের সাবধান থাকতে হবে।


Responses

0 Respones to "“ডায়বেটিস এর আদ্যোপান্ত” "

নিয়ে নিন HD ফেসবুক চ্যাট ইমু । যারা ফেসবুক চালান তারা একবার হলেও এদিকে আসেন
বিল গেটস ::: কম্পিউটার জগতের জীবন্ত কিংবদন্তী
Youtube এর Video দেখুন,শুধু মাত্র নিচের Addon ডাউনলোড এর মাধ্যমে ...
বই ও সফটওয়্যারের জন্য আপনাকে আর কারো কাছে সাহায্য চাওয়া লাগবে না …… আমার সংগ্রহের সবকিছু শেয়ার করলাম
 

Flash Labels by Way2Blogging

Translate

free counters

Clock

Return to top of page Copyright © 2010 | Platinum Templates Converted into Blogger Template by SEO Templates
^ Back to Top