ওজন বাড়ানোর উপায় (হার্ডগেইনারদের জন্য)




 জিমে ব্যায়াম করে ওজন বাড়াতে গেলে শুধু পেশী বাড়বে, ফ্যাট বাড়বে না- এমন হবে না। পেশীর সাথে ফ্যাটও বাড়বে। মোটামুটি হিসাবে ৬০% পেশী এবং ৪০% ফ্যাট বাড়ে। পরে এই ফ্যাট ভিন্ন লাইট ওয়েট ব্যায়াম এবং দৌড়িয়ে ঝরিয়ে ফেলতে হয়। বডিবিল্ডাররা এভাবেই দিন দিন ওজন বাড়ান।
অনেক খেলেও কাদের ওজন বাড়ে না- সেটা নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক—
যারা খুবই রোগা, অনেক খাওয়ার পরও যাদের ওজন বাড়ে না তাদেরকে বলা হয় হার্ডগেইনার (Hard gainer)- তাদের মেটাবলিজম (সহজ বাংলায় হজমশক্তি) খুব হাই বলে খাবার খাওয়ার সাথে সাথেই বার্ণ হয়ে যায়, তাই পুষ্টি গায়ে লাগে না। আবার যারা একটু খেলেই মেটা হয়ে যান (এদের সংখ্যাই বেশী)- তাদের মেটাবলিজম খুব লো।
মেটাবলিজম নিয়ে যখন কথা উঠেছে, তখন মাঝখানে এটা নিয়ে কিছু বলা যাক—
হজমশক্তি সবার এক হয় না। এটা অনেকটাই জন্মগত। তবে খুব হাই বা খুব লো- দুইটাই খারাপ। ভালো হলো মাঝামাঝি অবস্থানটা।

কিন্তু মেটাবলিজম ভালো করার উপায় কি?
আমাদের শরীর প্রতিঘন্টায় একটা নির্দিষ্ট পরিমান ক্যালরি বার্ণ করে। সাধারণত কিছু না করা অবস্থায় প্রতি ঘন্টায় ধরুন ৭৫ ক্যালরির মত। সেই হিসাবে একজন সুস্থ-সবল পরিপূর্ণ বয়স্ক মানুষের দিনে প্রায় ১৮০০ ক্যালরি পরিমান খাদ্য দরকার হয়। কিন্তু এখন কথা উঠতে পারে যে তাহলে এতবার না খেয়ে একবার ১৮০০ ক্যালরি খেলেই তো হয়।
কিন্তু না! কেননা আমাদের শরীর একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত একটা নির্দিষ্ট পরিমান ক্যালরি গ্রহণ করতে পারে। তার বেশী হলে শরীর অটোমেটিকভাবে বাকি ক্যালরিগুলো ফ্যাট হিসাবে শরীরের জমা করে রাখবে।
বর্তমানে এই “নির্দিষ্ট সময়” বলতে ৩ ঘন্টার কিছু কম সময়কে ধরা হয়। কেননা একবার খেলে সেটা হজম হতে মোটামুটি আড়াই থেকে ৩ ঘন্টা লাগার কথা। যেহেতু ঘুমের মধ্যে খাওয়া সম্ভব নয় সেহেতু ঘুম বাদে বাকি সময়টাতে আমাদের সারাদিনের ক্যালরি গ্রহণ করতে হবে।
ধরা যাক, উচ্চতা ৫ফুট ৬ইঞ্চি এবং ওজন ১৫০ পাউণ্ড বা ৬৭ কেজি ওজনের কেউ আলাদা ভাবে যদি শারীরিক পরিশ্রম না করে অর্থাৎ ওজন কমাতেও চান না বা বাড়াতেও চান না, তার দৈনন্দিন খাবারের চাহিদা ১৮০০ ক্যালরি। এখন প্রতি ঘন্টায় তো ৭৫ ক্যালরি করে খাওয়া সম্ভব নয়। আর একবার খেলে সেটা হজম হতে মোটামুটি আড়াই থেকে ৩ ঘন্টা লাগার কথা। এই সময়টাতে আপনার শরীরের চাহিদা হবে ৭৫*৩=২২৫ ক্যালরি। ঘুমের সময়টা যোগ করে এটাকে ৩০০ ক্যালরি ধরা হলো।
তাহলে দেখা যাচ্ছে প্রতি আড়াই/তিন ঘন্টা করে ৬ বারে ৩০০ ক্যালরি করে খেলে ১৮০০ ক্যালরি পূর্ণ করা সম্ভব।
৩০০ ক্যালরি খাবার ৩ ঘন্টায় হজম হয়ে গেলে ৩ ঘন্টা পর একটা সুস্থ্য-স্বাভাবিক শরীর আবার নতুন খাবারের অপেক্ষায় থাকবে।
এইবার শরীরের ম্যাজিক একটু ভালো করে খেয়াল করুন—
মানুষ না খেয়ে থাকলে শরীর প্রথমে শরীরে সঞ্চিত চর্বি বার্ণ করে শক্তি জোগাবে। ধীরে ধীরে পেশী বার্ণ হতে শুরু করবে। এভাবে শরীর ক্ষয় হবে এবং মানুষ দিন দিন রোগা হতে শুরু করবে।
১. আপনি যদি ৩ ঘন্টায় ৩০০-র বদলে ৩০০+ ক্যালরি গ্রহণ করেন তাহলে আপনার শরীর ৩ ঘন্টায় ৩০০ ক্যালরি বার্ণ করে শরীরের শক্তি যোগাবে। বাকি ক্যালরি সোজা ফ্যাট হিসাবে জমা করতে শুরু করবে। (ছেলেদের বেলায় তলপেট থেকে এবং মেয়েদের বেলায় নিতম্ব এবং উরু থেকে জমা শুরু হবে।)
২. আপনি যদি ৩ বার খান, তাহলে গড়ে ৫-৬ ঘন্টা পর পর ৬০০ ক্যালরি করে খেতে হবে। ৩ ঘন্টায় ৩০০ ক্যালরি ঠিকমতো হজম হবে, বাকি খাবার ঠিকমতো হজম না হয়ে ফ্যাট হতে শুরু করবে এবং এই পরের ৩ ঘন্টা শরীর দূর্বল লাগতে শুরু করবে।
৩. শরীর যখন দেখবে আপনি ৩ ঘন্টা পর আবার খাবার দিচ্ছেন না তখন সে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে শক্তি সঞ্চয় করতে শুরু করবে এবং সেটা ফ্যাট হিসাবে। এভাবে খাওয়াদাওয়ায় অনিয়মিত হতে শুরু করলে মেটাবলিজমের ১২টা বেজে যাবে।
৪. খাওয়া হজম হওয়া মাত্রই যদি আবার খাবার দেন (৩ ঘন্টা পর পর) তখন শরীরের আর বাড়তি কষ্ট করে অভ্যন্তরীন শক্তি সঞ্চয় করতে হবে না অর্থাৎ ফ্যাট জমাবে না। তখন শরীর পুরো দৃষ্টি দেবে আপনার বাহ্যিক কাজের উপর। মানুষ এসময়ই “কাজ-কর্মে বল” পায় বলে।
অর্থাৎ হজমশক্তি ভালো রাখতে নিয়মিত অল্প অল্প করে ঘনঘন করে খেতে হবে।
কিন্তু কি খাবেন?
অবশ্যই ব্যালান্সড ফুট! অর্থাৎ প্রতিবার খাবারে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট এবং ফ্যাটের সমন্বয় থাকতে হবে। মোটামুটি ৪০% প্রোটিন, ৩০% কার্ব, ৩০% ফ্যাট হতে হবে।
মাছ, মাংশ, ডিম, দুধ, টক দই, লাল চালের ভাত, আটার রুটি, শাকসবজি, ফলমূল, প্রচুর পানি।
কি খাবেন না?
সাদা ভাত, গোল আলু, ময়দা, সুগার, সোডিয়াম, এলকোহল, ক্যাফেইন, নিকোটিন, প্রসেসড ফুড, ক্যান ফুড, তৈলাক্ত ও মসলাজাতীয় খাবার।
কি ধরনের ব্যায়াম করবে?
সাধারণ ভাবে জিমে মানুষ এমন ওয়েট নেয় যা দিয়ে প্রতি সেটে ১০ থেকে ১৫ রেপস্‌ দিতে পারে। কিন্তু ওজন বাড়াতে হলে এমন ওয়েট নিতে হবে যা দিয়ে প্রতিবারে ৪ থেকে ৭ রেপস্‌ দিতে পারবেন। মেশিন ব্যবহার না করে ফ্রি ওয়েট নিয়ে ব্যায়াম করতে হবে। আর এমন সব ব্যায়াম করতে হবে সেসব ব্যায়ামে একই সাথে একাধিক পেশীতে চাপ পড়ে। এগুলোকে “কোর” বা “কম্পাউণ্ড” এক্সারসাইজ বলে। যেমন—
১. Bench Presses (বেঞ্চ প্রেস) – বুক, কাঁধ, বাহু (ট্রাইসেপ)
২. Overhead Presses (ওভারহেড প্রেস) – কাঁধ, বাহু (ট্রাইসেপ)
৩. Pull-ups/Rows (পুল-আপ / রো) – পিঠ, বাহু (বাইসেপ)
৪. Squats (স্কোয়াট) – পা, পিঠের নিম্নভাগ
৫. Deadlifts (ডেডলিফট) – পা, পিঠ, কাঁধ
৬. Bar Dips (বার ডিপ) – কাঁধ, বুক, বাহু (ট্রাইসেপ)
ঘুম কেন জরুরী?
প্রতিদিন ৮-৯ ঘন্টা বিশ্রাম বা ঘুমাতে পারলে ভালো হয়। কেননা মানুষ ঘুমের মধ্যেই বড় হয়। জিমে গিয়ে শুধু মাসলে পাম্প করা হয় কিন্তু শরীর পূর্ণ বিশ্রামে থাকার সময়ই পেশিগুলো গ্রো করবে।
এতক্ষন নিশ্চয়ই কিছু সাধারণ ধারণা পেয়েছেন। কিন্তু সব কিছুর সমন্বয় কিভাবে ঘটাবেন, অর্থাৎ ওজনটা বাড়াতে হার্ডগেইনাররা ঠিক কোন পদ্ধতি অবলম্বন করবেন সেটা সংক্ষেপে আলোচনা করা হচ্ছে—
পদ্ধতিটাকে সোজা বাংলায় বললে- দুই পা সামনে আগাতে হবে, এক পা পিছাতে হবে।
প্রথম দুই সপ্তাহে যত পারেন (কমপক্ষে ২৫০০ ক্যালরি), খাবেন। খুব একটা মেপে খেতে হবে না। তবে প্রোটিনটা যেন যথেষ্ট হয়। প্রতি ২ ঘন্টা পর পর কিছু না কিছু খাবেন। এবং সেই সাথে প্রচুর পানি।
জিমে গিয়ে খুব হার্ড ব্যায়াম করতে হবে। ওয়েট বেশী, রেপস কম। সপ্তাহে ৩ দিন (একদিন পর পর) ব্যায়াম করবেন। প্রতিটা সেশন ৬০ মিনিট থেকে ৭৫ মিনিটের মধ্যে রাখবেন। কেননা এর পরে শরীর ক্লান্ত হয়ে আসবে। তখন ব্যায়াম চালিয়ে গেলে পেশী ক্ষয় হবে। জিম শুরুর দুইঘন্টা আগে খাবেন এবং শেষ হওয়ার এক ঘন্টার মধ্যে অবশ্যই আবার খাবেন। যতটা সম্ভব বিশ্রাম নেবেন, ঘুমাবেন।
প্রথম দিন – বুক, পিঠ এবং পেটের ব্যায়াম।
দ্বিতীয় দিন- পা এবং পেট।
তৃতীয় দিন – কাঁধ, বাহু, পেট।
(বিস্তারিত অন্য পোস্টে দেয়া হবে)
দুই সপ্তাহ ঠিক মতো সব কিছু অনুসরন করলে কমপক্ষে এক থেকে দুইকেজি ওজন বাড়বে। কিন্তু এরপর আর যতই খান, আপনার শরীর আর নিতে পারবেন না কেননা আপনার এনাবলিক হরমোন আবার নরমাল পর্যায়ে চলে আসবে। তখন শরীরের বৃদ্ধিও কমে আসবে। তাই এর পর পিছিয়ে যেতে হবে অর্থাৎ পরের সপ্তাহে খাওয়া অনেক কমিয়ে দিতে হবে। ১৩০০-১৫০০ ক্যালরির মত খাবেন। খাদ্য খুব ক্লিন হতে হবে। ফ্যাট আর কার্ব তুলনামূলকভাবে কম খাবেন।
এই সপ্তাহের জিমের সেশনগুলো এমন হতে পারে—
সেশন ১ – বুক, কাঁধ, ট্রাইসেপ, পেট
সেশন ২ – পা, পেট
সেশন ৩ – পিঠ, বাইসেপ, পেট
(বিস্তারিত অন্য পোস্টে দেয়া হবে)
খুব হালকা ওয়েট নিয়ে ১০ থেকে ১৫ রেপস্‌ করে দেবেন। শরীরের উপর খুব চাপ দেবেন না। কেননা এই সপ্তাহে আপনি খাচ্ছেন কম। এই সপ্তাহটা হবে শরীরের মেইনটেনেন্স পর্ব মাত্র। এই পর্বে শরীর থেকে কিছুটা পানি বেরিয়ে যাবে তাই একটু হালকা হয়ে যাবেন। একটু ওজন কমে যাবে। এটা দেখে ভেঙে পড়বেন না। কেননা পরের দুই সপ্তাহে বেশী খাবার ও হার্ড ব্যায়ামের ফলে শরীর আবার ফুলতে শুরু করবে। পেটে খাবার পড়া মাত্রই শরীর স্পঞ্জের মত চুষে নেবে।
এভাবে প্রতি ৩ সপ্তাহে এক-দুই কেজি করে ওজন বাড়বে। এই টেকনিকটা যতদিন না আপনার ওজন পর্যাপ্তর বেশি হচ্ছে ততদিন চালিয়ে যাবেন। ধরুন আপনার ওজন দরকার ৭০ কেজি, তাহলে ৭৫ কেজি পর্যন্ত বাড়াবেন। তারপর অন্য টেকনিকে ব্যায়াম করে বাকি ৫ কেজি, যার বেশির ভাগই হবে ফ্যাট, ঝরিয়ে ফেলতে হবে।


Responses

0 Respones to "ওজন বাড়ানোর উপায় (হার্ডগেইনারদের জন্য)"

নিয়ে নিন HD ফেসবুক চ্যাট ইমু । যারা ফেসবুক চালান তারা একবার হলেও এদিকে আসেন
বিল গেটস ::: কম্পিউটার জগতের জীবন্ত কিংবদন্তী
Youtube এর Video দেখুন,শুধু মাত্র নিচের Addon ডাউনলোড এর মাধ্যমে ...
বই ও সফটওয়্যারের জন্য আপনাকে আর কারো কাছে সাহায্য চাওয়া লাগবে না …… আমার সংগ্রহের সবকিছু শেয়ার করলাম
 

Flash Labels by Way2Blogging

Translate

Dial Number:
dialcode.org
free counters

Clock

Return to top of page Copyright © 2010 | Platinum Templates Converted into Blogger Template by SEO Templates