মুক্ত ও ওপেন সোর্স সফটওয়্যার হল এমন একধরণের সফটওয়্যার যার মেধাস্বত্ব
(সফটওয়্যারের কপিরাইট) এমন যে, ব্যবহারকারীকে এ সফটওয়্যার ও এর সোর্সকোড
অনুশীলন, পরিবর্তন এবং এর নকশার মানোন্নয়ন করার অধিকার রয়েছে, যা
পূর্ণস্বত্ব-সংরক্ষিত এমন সফটওয়্যারে থাকে না। এ ধরনের সফটওয়্যারকে অনেক
সময় স্বাধীন সফটওয়্যারও বলা হয়ে থাকে।
কম্পিউটারে সাধারণত যে সকল কাজের জন্য সফটওয়্যার প্রয়োজন তার প্রায় সব
কাজের জন্যই মুক্ত ও ওপেনসোর্স সফটওয়্যার রয়েছে। এ ধরণের সফটওয়্যারের
আদর্শ উদাহরণ হল, জিএনইউ লিনাক্স বা গানুহ লিনাক্স। যার সোর্স কোড উন্মুক্ত
থাকার কারণে এটি তৈরি হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্বেচ্ছাসেবী
সফটওয়্যার নির্মাতাদের সমন্বিত উদ্যোগে। যা যে কেউ বাধাহীনভাবে ব্যবহার,
উন্নতিসাধন, এমনকি পুনর্বিতরণও করতে পারেন।
এ ধরণের সফটওয়্যারের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলঃ
- এ সফটওয়্যারসমূহের যথেচ্ছ বিতরণের অধিকার ( অর্থাৎ ব্যবহারর করা, কপি করা, বিক্রি করা ইত্যাদি) রয়েছে।
- এর সোর্স কোড বা সংকেত উন্মুক্ত অর্থ্যাৎ এর সোর্স কোড সহজেই সংগ্রহ করা যায়।
- মূল সফটওয়্যারকে ইচ্ছামত পরিবর্তন করার ও পরিবর্তিত সংস্করণকে বিতরণের অধিকার রয়েছে।
- যেকোন ব্যক্তির যেকোন স্থানে যেকোন কাজে সফটওয়্যারসমূহ ব্যবহারের অধিকার রয়েছে।
এছাড়া আরও যে সকল মুক্ত ও ওপেন সোর্স সফটওয়্যার রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম
হল নিত্য দাফতরিক কাজের জন্য ওপেন অফিস.অর্গ , ইন্টারনেট ব্রাউজিং এর জন্য
ফায়ারফক্স, ইমেইল আদান প্রদানের জন্য থান্ডারবার্ড, তাৎক্ষণিক বার্তা
বিনিময়ের জন্য সফটওয়্যার পিজিন, ডেস্কটপ পাবলিশিং বা প্রকাশনা কাজের জন্য
গিম্প, শব্দ ও চলচ্চিত্র চালানো জন্য ভিএলসি প্লেয়ার।
কিভাবে শুরু হল এই মুক্ত সফটওয়্যার আন্দোলন এবং তৈরি হল মুক্ত অপারেটিং সিস্টেম গানুহ লিনাক্সঃ
মুক্ত সফটওয়্যার আন্দোলনের সূত্রপাত হয় ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বরে জিএনইউ
বা গানুহ প্রজেক্ট শুরু মধ্য দিয়ে যার সূচনা করেন রিচার্ড ইন্সটলম্যান
নামের সে সময়কার একজন মেধাবী প্রোগ্রামার। রিচার্ড ইন্সটলম্যানের কর্মস্থল
আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ল্যাবে (এআই ল্যাব) তার ধারণা ছিল সহকর্মীদের
সাথে কাজ করার সময় একের ভাল অনুশীলনগুলো অন্যের সাথে বিনিময় করে, একে
অন্যকে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করে আরও ভাল প্রোগ্রাম তৈরি করা সম্ভব। কিন্তু
১৯৮১ সালে এআই ল্যাবে যখন পুরাতন কম্পিউটারের বদলে নতুন কম্পিউটার কেনা
হল, তখন দেখা গেল এর সাথে যে অপারেটিং সিস্টেম সফটওয়্যারগুলো দেওয়া হয়েছে
তার কোনটিই মুক্ত নয়। এবং এ কম্পিউটার যারা ব্যবহার করবেন তাদের এমন শর্তে
চুক্তিবদ্ধ হতে হবে যে এর কোন কিছু অন্যের কাছে উন্মোচন বা প্রকাশ করা যাবে
না। এর অর্থ হল এ কম্পিউটারটি ব্যবহারকারীকে তার যে কাছের বন্ধুকেও
সাহায্য না করতে বাধ্য করা। আর সফটওয়্যারের মালিকের নিয়ম তৈরি করলেন “আপনি
যদি অন্যের কাছে এটি প্রকাশ করেন তাহলে, আপনি একজন চোর। আপনি যদি এটির কোন
পরিবর্তন করতে চান তাহলে, আমাদের কাছে অনুমতি প্রার্থনা করুন।”
এ অবস্থায় রিচার্ড ইন্সটলম্যান সফটওয়্যারের মালিকদের এই স্বেচ্ছাচারিতা চূড়ান্ত ভাবে অনুধাবন করলেন যখন তিনি কাজ করতে গিয়ে প্রিন্টার নিয়ন্ত্রণ করার একটি প্রোগ্রাম চেয়েও প্রত্যাখ্যাত হন। তিনি আরও অনুধাবন করলেন যে কোন কম্পিউটার প্রোগাম নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী পরিবর্তন করার এবং অন্যকে বিতরণ ও অন্যকে সাহায্য করার স্বাধীনতা কম্পিউটার ব্যবহারকারীর থাকা উচিত। কারণ অন্যকে সাহায্য করাই হল সমাজের ভিত্তি।
তিনি সিদ্ধান নিলেন যেহেতু কম্পিউটার প্রোগ্রাম তৈরির দক্ষতা তার রয়েছে, তিনি নিজেই কম্পিউটার প্রোগ্রাম তৈরি করবেন, তা স্বাধীন ভাবে ব্যবহারের জন্য প্রকাশ করবেন এবং কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের একটি স্বাধীন সমাজ গঠন করবেন। ১৯৮৪ সালে তিনি তার এআই ল্যাবের চাকরী ছেড়ে দিলেন এবং মুক্ত অপারেটিং সিস্টেম গানুহ তৈরির করা কাজ শুরু করলেন। বিভিন্ন প্রতিকূলতার সাথে পাল্লা দিয়ে কাজ করতে গিয়ে, এটি তৈরি করার জন্য ১৯৯১ সাল পর্যন্ত তৈরি হল বেশ কয়েকটি সহযোগী সফটওয়্যার কিন্তু কোন অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করা সম্ভব হল না।
১৯৯১ সাল অপারেটিং সিস্টেম বাজারে বিল গেটসের পঞ্চাশ হাজার ডলারে ক্রয়
করা ডস নামের অপারেটিং সিস্টেমের একক আধিপত্য। পার্সোনাল কম্পিউটার
ব্যবহাকারীদের এ ছাড়া অন্য কোন বিকল্পও ছিল না। অন্য যে সব অপারেটিং
সিস্টেম প্রচলিত ছিল তাও ব্যাক্তিগত ব্যবহাকারীদের জন্য ছিল বেশ ব্যয়
সাপেক্ষ। বিশেষ করে উইনিক্স অপারেটিং সিস্টেম ঘরোয়া ব্যবহারের জন্য ছিল না।
১৯৮৭ সালে অ্যান্ড্রু টানেনবাম নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যক্ষ
শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের অপারেটিং সিস্টেম সম্পর্কে পড়ানোর জন্য তৈরি
করেছিলেন মিনিক্স নামের একটি অপারেটিং সিস্টেম, যার কোড শিক্ষার্থীদের কাছে
প্রকাশ করা হলেও, তা পরিবর্তণ এবং পুনর্বিতরণের কারও অধিকার ছিল না।এ অবস্থায় রিচার্ড ইন্সটলম্যান সফটওয়্যারের মালিকদের এই স্বেচ্ছাচারিতা চূড়ান্ত ভাবে অনুধাবন করলেন যখন তিনি কাজ করতে গিয়ে প্রিন্টার নিয়ন্ত্রণ করার একটি প্রোগ্রাম চেয়েও প্রত্যাখ্যাত হন। তিনি আরও অনুধাবন করলেন যে কোন কম্পিউটার প্রোগাম নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী পরিবর্তন করার এবং অন্যকে বিতরণ ও অন্যকে সাহায্য করার স্বাধীনতা কম্পিউটার ব্যবহারকারীর থাকা উচিত। কারণ অন্যকে সাহায্য করাই হল সমাজের ভিত্তি।
তিনি সিদ্ধান নিলেন যেহেতু কম্পিউটার প্রোগ্রাম তৈরির দক্ষতা তার রয়েছে, তিনি নিজেই কম্পিউটার প্রোগ্রাম তৈরি করবেন, তা স্বাধীন ভাবে ব্যবহারের জন্য প্রকাশ করবেন এবং কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের একটি স্বাধীন সমাজ গঠন করবেন। ১৯৮৪ সালে তিনি তার এআই ল্যাবের চাকরী ছেড়ে দিলেন এবং মুক্ত অপারেটিং সিস্টেম গানুহ তৈরির করা কাজ শুরু করলেন। বিভিন্ন প্রতিকূলতার সাথে পাল্লা দিয়ে কাজ করতে গিয়ে, এটি তৈরি করার জন্য ১৯৯১ সাল পর্যন্ত তৈরি হল বেশ কয়েকটি সহযোগী সফটওয়্যার কিন্তু কোন অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করা সম্ভব হল না।
এ সময় হেলসিনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র লিনুস বেনেডিক্ট টরভ্যাল্ড যিনি ছাত্রাবস্থাতেই কিছু পেশাদারি কাজের সাথে জড়িত ছিলেন। কাজ করতে গিয়ে তিনি অনুবভ করলেন ভোক্তার চাহিদা পূরণ করে এমন অপারেটিং সিস্টেমের বড়ই অভাব। তখন তিনি এমন প্রোগ্রাম তৈরি করার কথা চিন্তা করলেন যা কিনা কোন অপারেটং সিস্টেম ছাড়াই চলবে। তিনি লেখা শুরু করলেন, ১৯৯১ সালের সেপ্টেম্বরে তৈরি হল লিনাক্স কার্নেল। যা উপর ভিত্তি করেই পরবর্তীতে তৈরি হয় মুক্ত অপারেটিং সিস্টেম গানুহ লিনাক্স এবং বর্তমান সময়ের বহু মুক্ত অপারেটিং সিস্টেম।

Responses
0 Respones to "মুক্ত ও ওপেন সোর্স সফটওয়্যারের সহজ ইতিহাস"
Post a Comment